দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের ১১ মাস পর গতকাল দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সরকারের সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এদিন টিকা নিয়েছেন। প্রথম দিন টিকা পেয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। চলতি মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার ঢাকা মহানগরে ৫ হাজার ৭১ জনকে কভিড-১৯ প্রতিরোধের টিকা দেয়া হয়। রাজধানী বাদে ঢাকা বিভাগে ৪ হাজার ২৪৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৬৯৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৪৪৩, রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৭৫৭, রংপুর বিভাগে ২ হাজার ৯১২, খুলনা বিভাগে ৩ হাজার ২৩৩, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৪১২ ও সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৩৯৬ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনের দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পরীক্ষামূলক টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ২৬ জন নাগরিকের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয়। পরদিন রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে আরো ৫৪১ জনের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়। এদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়ায় গণটিকা কর্মসূচিতে যায় সরকার। সারা দেশে ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। টিকা প্রয়োগে ২ হাজার ৪০০টি দল কাজ করছে। প্রতিটি দল দিনে দেড়শ মানুষকে টিকা দিতে পারে।
প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা কেন্দ্রগুলোয় টিকা দেয়া হবে। গতকাল টিকা নেয়া ব্যক্তিদের আগেই অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়েছিল। এছাড়া টিকাকেন্দ্রেও নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। প্রথম ডোজের টিকা দেয়ার সময় গ্রহীতাকে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ বলে দেয়া হয়। টিকা নেয়ার আগে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কতদিন চলতে থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রতি মাসে সরকারি ছুটি বাদে দুই সপ্তাহ ধরে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন কেউ কেউ।
এদিকে টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধনের সুযোগ থাকলেও সেদিনই টিকা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, টিকাকেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে। এ সময় টিকা দেয়ার দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়া হবে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’-এর তিন কোটি ডোজ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছে। এর আগে ২১ জানুয়ারি ২০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড বাংলাদেশকে উপহার পাঠায় ভারত সরকার। এর বাইরে কোভ্যাক্স থেকে মোট ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। আগামী জুনের মধ্যে আসবে কোভ্যাক্সের সোয়া এক কোটি ডোজ টিকা।